হিল ময়না বিলুপ্তির পথে
খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য অঞ্চলে শিকারিদের উৎপাতের কারণে বিপন্ন হচ্ছে বনের ময়না। এটি হিল ময়না হিসেবেই পরিচিত। এই পাখি দ্রুত পোষ মানার কারণে শৌখিন পাখি পালকদের কাছে এর চাহিদা রয়েছে। তাই হিল ময়না সবচেয়ে বেশী শিকার হয় । এছাড়া প্রাকৃতিক বন নষ্ট এবং পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার কারণে দিন দিন বিলুপ্তির পথে হিল ময়না। বর্তমানে গভীর বন ছাড়া এদের দেখা মেলে না। শিকারিরা জানান, ‘এখন একটি পাখি শিকার করতে প্রচুর সময় লাগে।
মূলত মানুষের কারণেই হিল বা পাহাড়ি ময়না সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে। পাহাড়ে হিল ময়না অনেকটা প্রকাশ্যে বেচা -কেনা চললেও বন বিভাগ নিশ্চুপ।দীঘিনালার বাবুছড়া বাজার এলাকায় ঘুরে দেখা যায়,‘ প্রকাশ্যেই চলছে ময়না বিক্রি করছে। ময়নাটির বিক্রেতা জানান,প্রায় একমাস আগে এটি শিকারদের কাছ থেকে কিনেছেন।’
ময়নার বৈজ্ঞানিক নাম গ্রাক্যুলা রিলিজিওসা । রিলিজিওসা শব্দের অর্থ সুন্দরের দ্যোতক । ময়নার গায়ের পালক উজ্জ্বল কালো।রোদের আলোয় কালো রঙ চক চক করে।তার উপর কিছুটা সবুজ ও বেগুনি আভা । ময়নার মাথার পিছনের হলুদ আবরণে ডাকা ত্বক ।এই যেন রূপসীর গয়না বা কন্ঠহার । বাসন্তি রঙের ঠোঁট। ডানার বড় পালাকের আড়ালে কয়েকটি সাদা পট্টি থাকে।
ময়নার পা ধবধবে হলুদ। এরা সাধারনত বৃক্ষের উঁচু উঁচু ডালে থাকতে পছন্দ করে। লম্বায় দশ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে বন ময়না খুব কমন পাখি হলেও মানুষের অর্থ লোভ এবং শৌখিনতার কারণে ময়না বিপন্নে পথে ।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বাবুছড়া এলাকার এক শিকারী জানান,‘ তার কাছে একটি ময়না রয়েছে। ৩৫০০ টাকা হলেই তিনি বিক্রি করবেন। এছাড়া অগ্রীম অর্ডার নিয়েই পাখি (ময়না) ধরতে বের হই। ময়না সাধারনত বড় বৃক্ষের গর্তে বাসা বাধে। শিকারীরা জানান, ‘ অনেক সময় শিকার ময়না করা বাঁচে না। সুস্থ সবল একটি ময়না ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। সারা বছরে ৮ থেকে ১২ টি ময়না ধরা যায়।’
১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত আর্ন্তজাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের(আই.ইউ.সি এন) তালিকায় হিল ময়না আশংকাযুক্ত প্রাণীদের তালিকায় না থাকলেও শিকারীদের কারণে দিন দিন হিল ময়নার সংখ্যা কমছে। ফলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বনের ময়না প্রজনন। শিকারীদের উৎপাত ও ক্রমশ বন ও পাহাড় ধ্বংসের কারণেও অনেকটা বিলুপ্তির পথে এরা । বাংলাদেশ ,নেপালসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের এদের দেখা মিলে। বাংলাদেশের ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী আইনেও এ প্রজাতি সংরক্ষিত ।
নাড়াইছড়ি রেঞ্জের কর্মকর্তা মো.হারুনুর রশিদ বলেন,‘ বন্যপ্রাণী কেউ বেআইনিভাবে রাখলে তার বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। অতীতে বেশ কয়েকজনকে বনের পাখি বিশেষ করে বাণিজ্যিক উদ্দ্যেশে বিক্রি কালে জব্দ করে বনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বন্যপ্রাণী বিক্রি করা বন্ধে কঠোর নজরদারি রয়েছে বলে তিনি জানান ।